জন্নাতুল মাওয়া শালিকা। সদ্য প্রকাশিত এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় পেকুয়া আদর্শ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। পিতা সদর ইউনিয়নের ভোলাইয়্যাঘোনা এলাকার দৃষ্টি প্রতিবন্ধি শাহাব উদ্দিন মাতা মমতাজ বেগম। দু’জনই এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে সংসার চালান। বাড়ি বলতে একটি ছনের ছাউনি। যার চারপার্শ্বে পলিথিনের কাপড় দিয়ে ঢাকা। বৃষ্টির সময় ফুটো দিয়ে পানি পড়ে আর রোদের সময় ভিতরে সব সময় রোদ থাকে। তাদের আরো ৪ ছেলে মেয়ে রয়েছে। খুব কষ্টে তাদের নিয়ে সংসার চললেও বড় মেয়ে লেখাপড়ায় ছিল নাছোঁড় বান্দা। মায়ের শত বকোনীর শর্তেও ভাঙ্গা কুঁড়িরে কখনো মাঠিতে আবার কখনো চট বিছিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। সে পড়বেই। কুঁড়েঘরটি স্বর্ণের খনিতে রুপান্তর হওয়া শুরু করেছে এবতেদায়ী সমাপনী পরিক্ষায় ভাল রেজাল্টের মাধ্যমে। সে সবার সহযোগিতায় অনেক দূর যেতে চাই। পেকুয়ায় তার ভাল রেজাল্ট আজ সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয়।
২৯ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় সরোজমিন ভোলাইয়্যা ঘোনাস্থ ওই ভাঙ্গা কুঁড়িরে গিয়ে তাদের পিতা মাতা কর্মে থাকায় পাওয়া না গেলেও (সন্ধ্যা ৬টায় পাওয়া যায়) স্বর্ণের খনি শালিকাকে পাওয়া য়ায়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাই। সে সাংবাদিক কি বুঝতে না পারলেও তার লেখাপড়া কিভাবে চলছে এবং কিভাবে এতো ভাল রেজাল্ট তার প্রশ্ন শুনে সে বলব আপনি কি পেপারে দিবেন। তখন আমি বলি তাই করবো। তখন সে অকপটে বলতে শুরু করলো তার লেখাপড়া ও পরিবারের অবস্থান। তার কথাটি দৈনিক বাঁকখালী পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হল।
আমি মহিলা মাদ্রাসায় পড়ি ৫ভাই বোন। বাপ (পিতা) অন্ধ কৃষি কাজ করেন। অনেক কষ্ট সংসারে। ১ম শ্রেনী থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত অনেক কষ্ট করি পড়ালেখা করি। ঘর থেকে ঈদে ঈদে জামা দেয়। মাদ্রাসা থেকে বই আর উপবৃত্তির টাকা দেয়। বাড়ি ভাংগা ঝর(বৃষ্টি) হলে পড়ালেখা করতে ন পারি। আর রইদ(রোদ)হলে আরো বেশি হষ্ট(কষ্ট) হয়। তারপরও আমি লেখাপড়া ন ছাড়ি। আপনারা দোয়া করলে আরো বেশি পড়তে চাই। কিন্তু আর বাপরতে টাকার অভাব। এ বলে সে আর বলতে চাইনি।
পরে সন্ধ্যায় ৬টায় আবারো তার বাড়িতে গেলে পিতা শাহাব উদ্দিন ও মাতা মমতাজ বেগমের সাথে কথা হয়। আনুষাঙ্গিক লেখাপড়ার খরচের অভাবে তারা ময়ের লেখাপড়া বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ে তাদের কোন কথা না শুনে লেখাপড়া চালিয়ে যান। পুরো মহিলা মাদ্রাসায় সে ভাল রেজাল্ট করায় অনেক খুশি। ভবিষ্যতে আরো বেশি লেখাপড়া করার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও আর্থিক অভাব অনটন এর কারণে পারবে কিনা সন্দেহ পোষন করেছেন। তিনি মেয়ের উচ্চ শিক্ষার্থে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এদিকে নিস্তব্ধ রাশেদ নামের এক ফেইসবুক আইডিতে তাকে নিয়ে এক লেখায় উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু তাকে অভিনন্দন জানিয়ে শালিকাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
পেকুয়া আদর্শ মহিলা মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম জানান, আমাদের মাদ্রাসা থেকে এবতেদায়ী সমাপনী পরিক্ষায় ৩জন এপ¬াস পেয়েছে। তার মধ্যে জন্নাতুল মাওয়া শালিকা প্রথম হয়েছে। তার পরিবার অনেক অসহায়। সবার সহযোগিতা ফেলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।
পাঠকের মতামত